Saturday, July 26, 2025

সরকারকে কঠোর হতে বলল যেসব রাজনৈতিক দল

আরও পড়ুন

ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও উত্তেজনার দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দলগুলো সরকারকে কঠোর হতে বলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন ব্যর্থ হচ্ছে, তাও তদন্তের পরামর্শ দিয়েছেন নেতারা।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলিকে পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা দলগুলোকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। ভালো নির্বাচনের জন্য ভালো পরিবেশ নিশ্চিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছেন তিনি।

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে আলোচনা হয়। কোনো ঘটনায় আগাম গোয়েন্দা তথ্য না পাওয়ার কথা জানান সরকারপ্রধান। সমস্যা সমাধানে দ্রুত নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া সরকারের কাজে সমন্বয়হীনতা এবং উপদেষ্টার কাজের সমালোচনা করেছে দলগুলো। সিদ্ধান্ত হয়, যেখানেই ফ্যাসিবাদ, সেখানেই মোকাবিলা করা হবে বলে বৈঠক সূত্র সমকালকে জানিয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলী আশরাফ আকন ও যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান।

আরও পড়ুনঃ  বিমান দুর্ঘটনা: বোনের পর চলে গেলো ৯ বছরের নাফিও

উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান, সি আর আবরার, মাহফুজ আলম, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

বৈঠকের পর বিএনপি নেতারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। ডা. তাহের বলেন, বুধবার থেকে যেখানে ফ্যাসিবাদ, সেখানেই মোকাবিলা করা হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছে প্রধান উপদেষ্টাকে।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনার পর ক্ষোভ-বিক্ষোভে সচিবালয়ে শিক্ষার্থীরা ঢুকে ভাঙচুর, উত্তরায় দুই উপদেষ্টাকে ৯ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখা, গোপালগঞ্জে হামলা ও প্রাণহানির ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ চার দলের নেতাদের ডাকেন সরকারপ্রধান।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত অস্থিরতা কাটবে না। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হবে না।
তখন প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভালো নির্বাচনের জন্য ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা উন্নতি করতে হবে।

এই পর্যায়ে আমীর খসরু বলেন, সাধারণ সময় এবং নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা এক নয়। তখন ড. ইউনূস বলেন, দুটোকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেসব ঘটনা ঘটছে, তা মোকাবিলায় প্রশাসনের দুর্বলতা রয়েছে। সংস্থাগুলোর আগাম তথ্য পেলে এড়ানো যেত। সচিবালয়ের গেট পর্যন্ত লোক চলে যাওয়ার আগে খবর পাওয়া যায়নি। বাহিনীগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না।

আরও পড়ুনঃ  ঢাকায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, সবশেষ পরিস্থিতি যা জানা গেল

তখন জামায়াতের ডা. তাহের বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর তাদের বিরুদ্ধে অভিযান হয়নি। একই অভিমত জানান নাহিদ ইসলাম ও গাজী আতাউর রহমান। তখন প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সবাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তৎপর থাকবেন।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতের তরফ থেকে বলা হয়, সরকার নিজেই বলেছে, ভালো নির্বাচন চায়। কিন্তু পরিবেশ না হলে কীভাবে হবে? এর জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা লাগবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সরকারকে সহযোগিতা করছে। তবে অনির্বাচিত সরকার থাকলে এগুলো ঘটতেই থাকবে।
জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলেন, সরকারকে কঠোর হতে হবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শক্ত হতে হবে। বিএনপি নেতারা বলেন, যে আইন হাতে তুলে নেবে, তার বিরুদ্ধেই কঠোর হতে হবে সরকারকে।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকারের কাজে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। উপদেষ্টাদের কাজেও দায়িত্বহীনতা রয়েছে।
দুই উপদেষ্টার উত্তরায় অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে সরকারের সমালোচনা করেন জামায়াত নেতারা। তারা বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে উপদেষ্টারা কীভাবে সেখানে গেলেন? কী গোয়েন্দা তথ্য ছিল? উপদেষ্টাদের যদি রাজনৈতিক দলের সহায়তায় উদ্ধার করতে হয়, তাতে সরকারের দুর্বলতাই প্রকাশ পায়।

আরও পড়ুনঃ  মধ্যরাতে হাসপাতালে খালেদা জিয়া, কি হয়েছে জানা গেল

বৈঠকের পর আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে শুধু ঐক্যের কথা বলেননি; উনি বলেছেন, ঐক্য আরেকটু দৃশ্যমান হলে ভালো হয়। যদি একসঙ্গে থাকেন, এটা যদি মানুষ দেখে, মানুষের মধ্যে স্বস্তির ভাব আসবে; অনেক বেশি মানুষ খুশি হবে এটা দেখে।

রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দুটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমটা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার ক্ষেত্রে, সরকার যেন আরও শক্ত অবস্থান নেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কিছুটা ঘাটতি আছে, সে কথা বলেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার দিকে সুষ্ঠুভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত।

আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছে, ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে তাদের মধ্যে কোনো রকম মতভিন্নতা, মতবিরোধ নেই। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, রাজনীতির মাঠে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে কথা বলতে পারি। এর মানে এটা না যে, তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।

গাজী আতাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন গত দুই দিনের ঘটনায়, পরাজিত শক্তি, বিশেষ করে ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসররা সুযোগ নিতে চাইছে। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যাতে দেশে একটি অস্থিরতা তৈরি করা যায়, জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো যায়, গুজব ছড়ানো যায়।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ